সুরের মূর্ছণায় বাজিমাত, রবীন্দ্রভারতী থেকে রবীন্দ্রসংগীতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হলেন সিতারা সুলতানা

বেঙ্গল মিরর ডেস্কঃ একটা সময় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম ছেলেমেয়েদের দেখা মিলত না। আস্তে আস্তে শিক্ষার হার বাড়ছে। স্কুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ভিনরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও জায়গা করে নিচ্ছেন পিছিয়েপড়া সংখ্যালঘু ঘরের ছেলেমেয়েরা। উচ্চতর শিক্ষা বা গবেষণার জন্য পাড়ি জমাচ্ছেন বিদেশেও। মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় যেমন স্থান দখল করছেন, তেমনি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও দুর্দান্ত ফলাফল করছেন মুসলিম পড়ুয়ারা। তেমনি একজন কৃতীর নাম সিতারা সুলতানা। রবীন্দ্রসংগীতের মূর্ছণায় তিনি এবার মাত করেছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে। প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে তিনি এবার নজর কেড়েছেন সকলের।

ছবিঃ সিতারা সুলতানা


উল্লেখ্য, সিতারা সুলতানাদের আদি বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের নবগ্রামে।বর্তমানে তাঁর আব্বা-আম্মা বর্ধমান শহরে এক সরকারি আবাসনে থাকেন। সেখানেই তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। আব্বার নাম মুহাম্মদ জিন্নাত আলি। আম্মা লুৎফুন্নেসা খাতুন। সিতারা সুলতানা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবছর স্নাতকোত্তর রবীন্দ্রসংগীত বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। সব সেমেস্টার মিলিয়ে তাঁর প্রাপ্ত নম্বরের গ্রেড ৯.১৯(এ++)।

সিতারা জানান, তাঁর মধ্যে গানের সম্ভাবনা আছে দেখেই, তাঁর আব্বা-আম্মা সিতারাকে ছোটবেলা থেকে গান শিখিয়েছিলেন। এভাবেই জীবনের বড় আশ্রয় হয়ে উঠল গান। পরম সুখে, আনন্দ বা বিষাদে রবীন্দ্রনাথের গানকে আঁকড়ে ধরা। পথচলায় সবসময়ের ছায়াসঙ্গী হয়ে রইলেন আব্বা মুহাম্মদ জিন্নাত আলি। গানকে সঙ্গী করেই মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পাশ করেছেন ভালো নম্বর নিয়ে। উচ্চমাধ্যমিকে মিউজিক বিষয়ে সব্বোর্চ্চ নম্বর(৯২)সহ ৮০ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেন তিনি।


সিতারা সুলতানা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কলেজ থেকে ইংরাজি সাহিত্যে সাম্মানিক ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস থেকে ইংরেজিতে এম.এ. পাশ করেন ২০১৫ সালে। ২০১৭ সালে বর্ধমান থেকেই তিনি বি.এড করেন। তারপর ভর্তি হন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবছর সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। 

সিতারা শুধু পাঠক্রমিক শিক্ষাতেই পারদর্শী নন, তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পেয়েছেন নানান প্রাইজ।বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃকলেজ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় ১২০টি কলেজের মধ্যে রবীন্দ্রসংগীতে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন তিনি। বর্ধমান পৌর-উৎসবেও প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন একাধিক প্রতিযোগিতায় স্বকীয় গায়কীতে নজর কেড়েছেন সিতারা। সিতারা বলেন, ছোটবেলা থেকে রবীন্দ্রনাথের গানকে আশ্রয় করে বেড়ে উঠেছি। কিন্তু কয়েকবছর আগে যখন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরাজী সাহিত্যে এম.এ শেষ করে বি.এড. করছি, সেই সময় পড়াশোনার চাপে গানের চর্চা থেকে অনেকটাই দূরে সরে গিয়েছিলাম। তাতে মনে হয়েছিল নিজেকেই শাস্তি দিচ্ছি। এরই মাঝে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রবীন্দ্রসংগীত এম.এ. তে ভর্তি হলাম। তারপর শুরু হল এক নতুন অধ্যায়। জীবনের সবচেয়ে বড় আবেগ 'সঙ্গীত'কে আলিঙ্গনে বাঁধলাম। আজ সফল হয়েছি। নিষ্টা ও ভালোবাসা থাকলে সাফল্য আসবেই, এমনটাই বিশ্বাস তাঁর। 

এক প্রশ্নের জবাবে সিতারা বলেন, আমার আব্বু-আম্মার উৎসাহ ও সাহস সঙ্গী না হলে, আমার এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পারতাম না। সিতারা তাঁর সংগীতগুরু অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়, স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তাঁর স্কুলের দিদিমণি মঞ্জরী নাগ, ড. সুমন জানা, দাদাতুল্য ধনঞ্জয় ব্যানার্জির সাহচর্য ও অনুপ্রেরণা যে পাথেও সেকথাও উল্লেখ করেন সিতারা। তাঁর স্বামী মাসুদ আহমেদ নিজে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হলেও সংগীত চর্চায় সর্বদা পাশে থেকেছেন। অর্পন পাল ও শ্যামাপ্রসাদ কুন্ডুর স্নেহ ও সুপরামর্শ তাঁকে বিগত দু'বছর ধরে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করেছে। 

তথ্যঃ পুবের কলম, সিতারা সুলতানা, ফেসবুক।

Post a Comment

0 Comments