আসিফ রেজা আনসারী
ডা. কাফিল খান উত্তরপ্রদেশের গোরখপুর-এর একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, সুচিকিৎসক ও অধ্যাপক। রোগীর পরিবারের মুখে মুখে তাঁর নাম থাকলেও ডা. কাফিল খানকে বাইরের রাজ্যের মানুষ তেমন জানতেন না। কিন্তু ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশের বিআরডি হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট ও শিশু মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর নাম। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় চার বছর। ফের চর্চায় ডা. কাফিল। এখন তিনি ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প করছেন বিভিন্ন জায়গায়। এবার তাঁর গন্তব্য পশ্চিমবাংলা।
উল্লেখ্য, এক মিথ্যা মামলায় জেলে গিয়েছিলেন কাফিল। সম্প্রতি তিনি মুক্তি পেয়েছেন। করোনার সময়ে তিনি দেশবাসীর সেবা করতে চেয়ে তার নামে মিথ্যা অভিযোগ তুলে নেওয়ার আর্জি জানান। তাতে অবশ্য কর্ণপাত করেনি যোগী-রাজ্যের পুলিশ। কিন্তু কাফিল খানের ব্রত- গ্রামীণ ভারতের বঞ্চিত মানুষদের তিনি বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেবেন। অসহায়দের দেবেন ওষুধপত্র। তাই নিজের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ডা. কাফিল খান মিশন স্মাইল ফাউন্ডেশন'-এর মাধ্যমে তিনি পথে নেমেছেন। ‘ডক্টরস্ অন রোড' কমসূচি নিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি রাজ্যে মেডিক্যাল ক্যাম্প করেছেন। ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন তিনি। জাতীয় চিকিৎসক দিবস ও ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যু দিন উপলক্ষে আগামী ১ জুলাই কলকাতায় যোগ দেবেন এক অনুষ্ঠানে। পাঁচ দিনের বাংলা সফরে কলকাতা ও পাশ্ববর্তী জেলাতেও করবেন ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প ও রোগ-সচেতনতা শিবির। জাস্ট ইয়োলো ফাউন্ডেশন, কলকাতা খিলাফত কমিটি প্রভৃতি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে শামিল হবেন তিনি।
এ নিয়ে জাস্ট ইয়োলো ফাউন্ডেশন-এর তরফে ড. নওসিন বাবা খান বলেন, কলকাতার ছাতুবাবু লেন, কাঁকিনাড়া ও তপশিয়া ফুটবল ময়দানে মেডিক্যাল ক্যাম্প করা হবে। মূলত শিশুদের চিকিৎসা করা হবে। অন্যরাও সুযোগ পাবেন। তবে বয়স্ক ও গরিব মহিলাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এক-একটি ক্যাম্প-এ দুই থেকে আড়াইশো মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। আগে থেকেই মাইকিং, কুপন বিলি করা হবে। ডা. কাফিল খানের সঙ্গে থাকবেন ৬ জন চিকিৎসক, এখানকার আরও ৮-১০ চিকিৎসক সেই কাজে শামিল হবেন। গোসাবা ও বর্ধমানেও ক্যাম্প হবে।
কলকাতা খিলাফত কমিটির প্রেসিডেন্ট তথা রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ আহমদ খান জানান,তপশিয়ার ক্যাম্প থেকে সব ধরণের রোগের চিকিৎসা করা হবে। যতটা সম্ভব বিনামূল্যেই মেডিসিন দেওয়ার বন্দোবস্ত হবে। করোনাকালে সবরকম বিধিনিষেধ মেনেই ক্যাম্প পরিচালনা করা হবে।
এ বিষয়ে ডা. কাফিল খান জানান, ভারতের বঞ্চিত মানুষ ও শহরের বস্তিবাসী যাঁরা চিকিৎসার সুবিধা পান না, তাঁদের কাছে তিনি পৌঁছাতে চান। বিগত প্রায় ৭৬ দিন ধরে ময়দানে রয়েছেন। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত রাজস্থান, দিল্লি, বিহার, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে একদিকে যেমন মেডিক্যাল ক্যাম্প করা হয়েছে, অন্যদিকে করোনা নিয়ে সাধারণ মানুষকেও সচেতন করছি। মেডিক্যাল ক্যাম্প করে শিশুদের চিকিৎসা করা, ওষুধ দেওয়া, মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সরকারের কাছে আমাদের দাবি ‘সকলের জন্য স্বাস্থ্য’ সুনিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। মোট জিডিপির কমপক্ষে ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে খরচ করতে হবে।
জানা গিয়েছে, ডা. কাফিল খানের মিশনকে সার্থক করে তুলতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন ডা. আশিষ গুপ্তা, ডা. আজহার, জাফর আজম, শামস শাহনাওয়াজ, সুরাজ কুমার সিং, ফাহাদ, জয়া, হরিশ, মুদাশির, ফয়সাল, আকবর, যশ ওঝা সিং সহ অনেক ডাক্তার ও স্বেচ্ছাসেবী।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশের গোরখপুর বিআরডি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট তৈরি হয়। সে সময় নিজের উদ্যোগেই অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেন ডা. কাফিল তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাসানো হয়। পরে অবশ্য ডা. কাফিল মুক্তি পান এবং আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। সেই ঘটনার পর থেকেই স্বাস্থ্য শিক্ষাসহ নানান ইস্যুতে সরব তিনি। তারপর সিএএ নিয়েও মুখ খুলেছেন ডা. কাফিল খান। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএএ বিরোধী বক্তৃতার জন্য দেশদ্রোহের মামলায় তিনি গ্রেফতার হন। পরে তাঁর নামে জাতীয় সুরক্ষা আইন বা এনএসএ প্রয়োগ করা হয়। এখন তিনি জামিনে মুক্ত রয়েছেন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি বিভিন্ন রাজ্যে মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিচালনা করছেন।
সৌজন্যে: দৈনিক পুবের কলম
0 Comments