আসিফ রেজা আনসারী
আমাদের দেশের অনেক ছেলেমেয়ে বিদেশে পড়াশোনা করতে যান। সাধারণ বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি গবেষণা ও ডাক্তারি পড়াশোনাও করতে যান অনেকে। নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশ ছাড়া বাইরের দেশ থেকে ডাক্তারি ডিগ্রি পাওয়ার পর সবাইকে দিতে হয় একটি বিশেষ পরীক্ষা। যার নাম “এফএমজিই’ বা ফরেন মেডিক্যাল গ্রাজুয়েট এক্সামিনেশন। তথ্য বলছে, মোট পরীক্ষার্থীর মাত্র ১৬-১৭ শতাংশ পাস পরতে পারেন। সেই কঠিন পরীক্ষায় দেশের মধ্যে প্রথম কুড়ি বা রাজ্যের মধ্যে প্রথম হয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা ইমতেহান উদ্দিন মোল্লা।
উল্লেখ্য, ইমতেহান উদ্দিন মোল্লার বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার থানার অন্তর্গত সরিষা হাটে। তার পিতা নাসিরুদ্দিন মোল্লা একজন ব্যবসায়ী, মা লুতফুনরিসা বিবি গৃহবধূ। তিনি ২০১১ সালে সরিষা রামকৃষ্ণ মিশন শিক্ষামন্দির থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। ২০১৩ সালে বিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন একই স্কুল থেকে। তারপর চলে যান বিদেশে। রাশিয়ার একটি মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন। ২০১৯ সালে ডাক্তারিতে স্নাতক হন। তারপর এফএমজিই'র জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন। এ বছর এফএমজিই জুন সেশনের পরীক্ষায় মোট ৩০০ নম্বরের মধ্যে ২১৮ পেয়েছেন ইমতেহান। যদিও প্রথম স্থান অধিকারীর নম্বর ২৫৭। তবে মাত্র ২০-২৫ জন দুই শতাধিক নম্বর পেয়েছেন।
জানা গিয়েছে, ‘এফএমজিই’ পরীক্ষায় পাস করতে হলে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হয়। বিদেশ থেকে ডিগ্রি অর্জনের পর মাত্র ১৬-১৭ শতাংশ পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ‘এফএমজিই’ পাস না করতে পারলে দেশে ডাক্তারি প্র্যাকটিস করা বা উচ্চ-শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়না। মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার স্বীকৃতি বা রেজিস্ট্রেশন পেতে হলে অবশ্যই এই পরীক্ষা পাস করতে হয়।
দেশের সেরাদের মধ্যে স্থান বা রাজ্যে প্রথম হওয়ায় স্বভাবতই খুশি ইমতেহান উদ্দিন মোল্লা।তিনি বলেন, বিদেশ থেকে ডাক্তারি পড়ার পর আমাদের সরকার কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দেন। আসলে সরকার পরখ করতে চায় যে, একজন পড়ুয়া বিদেশে সঠিকভাবে পড়াশোনা করেছে কিনা। তাই কঠিন প্রশ্নের জন্য অনেকেই পাস করতে পারে না। তাঁর সাফল্য নিয়ে ইমতেহান উদ্দিন মোল্লা বলেন, আমি অন্যদের বলব- ডাক্তারি পড়াশোনার যে সিলেবাস তা ভালো করে পড়তে হবে। ফরেন্সিক মেডিসিন ও ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস-এর উপরও পড়াশোনা করতে হবে, তবেই ‘এফএমজিই' পাস করা যাবে। তিনি আরও বলেন, আমি এসএসকেএম-এ যুক্ত হতে চাই, সেই সুযোগ এসেছে। আগামীদিনে মানুষের সেবার মাধ্যমে পিতা-মাতার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।
প্রসঙ্গত, মেডিক্যালের সর্বভারতীয় পরীক্ষা ‘নিট’ পাস করার পর আমাদের দেশে ডাক্তারি পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া যায়। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও বায়োজলির উপরে এই পরীক্ষা হয়ে থাকে। একবার মেডিক্যালে সুযোগ পেলে এমবিবিএস পাস করার পর আর কাউকেই পরীক্ষা দিতে হয় না। সরাসরি প্র্যাকটিস করতে পারেন। সূত্রের খবর, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সকলের জন্য অভিন্ন পরীক্ষা পদ্ধতি আনতে চলেছে ভারত সরকার। এবার থেকে সবাইকে এমবিবিএস পাস করে ন্যাশনাল এক্সিট এক্সাম বা নেক্সট্ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
সৌজন্যে: দৈনিক পুবের কলম
0 Comments