কিবরিয়া আনসারী
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসের নিজস্ব জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন হয়েছে। আন্দোলনের চাপে সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর থেকে জানানো হয়, আলিয়ার জমি অন্য প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর করা হবে না।
কিন্তু ২১ শে নভেম্বর, সোমবার এক প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, “আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিটা এখন কি কাজে লাগছে? ওদের তো নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস করে দিয়েছি।” তিনি দলীয় নেতাদের নির্দেশ দেন আলিয়ার পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করতে। উত্তরে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, "কথা বলে হবে না, এটা করে নিতে হবে। অন্যথায় বোঝাতে বোঝাতে ৫ বছর কেটে যাবে। ছেলেগুলো সব বদমাইশ।" অর্থাৎ তিনি পরোক্ষভাবে জোর করে ওই জমি দখল করার কথা বলেন। আর এতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে আলিয়ার শিক্ষার্থী, প্রাক্তনিরা।
মন্ত্রীর মন্তব্যের নিন্দা করে আলিয়ার এক পড়ুয়া মিরাজুল ইসলাম বলেন, “তিনি একজন মন্ত্রী হয়ে কিভাবে পড়ুয়াদের এই ধরনের কুরুচিকর মন্তব্য করতে পারেন। তার মন্তব্যকে ধিক্কার জানাই। মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, "আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছি, তিনি কখনও আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে আসেননি। এটা প্রথম নয়, আগেও আলিয়ার জমি জোর করে দখল করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু আমরা এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বো না।"
জানা গিয়েছে, দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে পড়ুয়াদের দাবি মেনে আলিয়ার ওই জমিতে হস্টেল, খেলার মাঠ, স্টাফ কোয়াটার তৈরি করার কথা বলা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল সমস্যা রয়েছে, ছাত্রীদের থাকার সমস্যা রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের থাকার সমস্যা রয়েছে, খেলার মাঠ নেই। এই সমস্যাগুলি মেটানোর জন্য পার্ক সার্কাসে অবস্থিত আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট জমিটি যথেষ্ট ছিল। কিন্তু সেই জমির একাংশ চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজকে দেওয়ার জন্য যেভাবে সরকার চাপ সৃষ্টি করে চলেছে তা মেনে নিতে পারছে না ছাত্রছাত্রীরা।
আলিয়ার এক পড়ুয়া ইরফান সিদ্দিকী বলেন, "আন্দোলন চলাকালীন বিভিন্ন দাবি নিয়ে কয়েকবার নবান্নে গিয়েছিলাম আমরা। তখন আমাদের জানানো হয়, আলিয়ার ওই জমিতে একটি গার্লস ও বয়েজ হস্টেল করা হবে। এর জন্য ৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ৩ বছরের মধ্যে সব কাজ সম্পূর্ণ হবে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোনও কাজই করা হয়নি।"
Aliha University, Park Circus, TBM |
রাজ্যের একমাত্র সংখ্যালঘু বিশ্ববিদ্যালয় আলিয়া। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার দরিদ্র সংখ্যালঘু ছেলেমেয়েরা এখানে পড়াশোনা করে। অনেক পড়ুয়া হস্টেল না পেয়ে বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাসের অ্যামিনিটি সেন্টারে থেকে পড়াশোনা করছে। অনেকের কলকাতায় হাজার হাজার টাকা খরচ করে পড়াশোনা করার সামর্থ নেই। হস্টেল না পেয়ে অনেকের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
পড়ুয়ারা বলেন, “আমরা একটা বিষয় স্পষ্ট করে দিতে চাই যে, আমরা জীবন দেব-রক্ত দেব, কিন্তু আলিয়ার জমি কোনও মতে ছাড়ব না। একটি প্রতিষ্টানের জমি নিয়ে অন্য একটি প্রতিষ্টানকে দিয়ে দেওয়া দ্বিচারিতা ছাড়া অন্য কিছু নয়। আমরা কোনও মতেই এটা হতে দেব না।”
আলিয়ার এক অধ্যাপক সোশ্যাল সাইটে প্রশ্ন করে লিখেছেন, "দিদি ১০ বছর সংখ্যালঘু মন্ত্রীও ছিলেন। আপনি কি জানেন না যে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাসে একটি ক্যাম্পাস আছে? ছেলেদের জন্য একটি হস্টেল, একটি স্টাফ কোয়ার্টার, একটি টিচিং ব্লক এবং একটি ছোট খেলার মাঠ নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ করা হয়েছিল। আলিয়ার ছাত্রদের কি সেই সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নয়? গরিব মুসলমানরাও হাসপাতালে চিকিৎসা পায় বলে শুধু মেডিক্যাল ছাত্রদের কি সব সুযোগ-সুবিধা দরকার?"
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের জেরে ইত্যিমধ্যেই বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, আলিয়ার জমি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
0 Comments