পাটশিল্প বাঁচাতে কড়া পদক্ষেপ মোদির, প্যাকেজিং-এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করতেই হবে চটের ব্যাগ

জাহানারা খাতুন 

একটা সময় পাট শিল্পে বাংলার অবস্থান দেশের মধ্যে সেরা ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে এই শিল্প ক্রমশ তার গৌরব হারাচ্ছে। তবে সরকার এই পাট শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারই অংশ হিসেবে এ বছর গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিল কেন্দ্র সরকার। ২০২৩-২৪ পাট বর্ষে (১ জুলাই, ২০২৩ থেকে ৩০ জুন, ২০২৪) প্যাকেজিং-এর কাজে পাটের বাধ্যতামূলক ব্যবহার সম্পর্কিত সংরক্ষণের নিয়মনীতি অনুমোদিত হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে।



সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই নিয়মনীতি অনুসারে, ২০২৩-২৪ পাট বর্ষে খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ এবং চিনির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ চটের ব্যাগের ব্যবহার প্যাকেজিং-এর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ফলে, সংরক্ষণ সংক্রান্ত বর্তমান প্রস্তাবে কাঁচা পাটের দেশীয় উৎপাদনের বিষয়টিকেও সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হবে। শুধু তাই নয়, প্যাকেজিং-এর একটি সামগ্রী হিসাবে পাটের ব্যবহার নিশ্চিত করে তোলার পথও প্রশস্ত হবে। মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তের ফলে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ অর্থাৎ, স্বনির্ভর ভারত গঠনের আদর্শও যথাযথভাবে অনুসরণ করা সম্ভব হবে বলে সরকার মনে করে। 

দেশে ২০২২-২৩ পাট বর্ষে খাদ্যশস্য প্যাকেজিং-এর ক্ষেত্রে প্রায় ৬৫ শতাংশ পাটের ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে। এ সম্পর্কিত আইনটির বাস্তবায়নের পথ অনুসরণ করে সরকার পাটকলগুলিতে কর্মরত ৪ লক্ষ শ্রমিক ও কর্মীর রুজি-রোজগারের পথ নিশ্চিত করে তুলবে। পাটশিল্পের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত আরও ৪০ লক্ষ পরিবারও এর ফলে আর্থিক দিক থেকে উপকৃত হবে।

প্রসঙ্গত, দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে পাটশিল্পের এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষত, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলির অর্থনীতিতে পাটশিল্পের ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেশের পূর্বাঞ্চলে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে, এটি হল এক অন্যতম প্রধান শিল্প।

জেপিএম আইনের আওতায় সংরক্ষণ নীতি ৪ লক্ষ শ্রমিক-কর্মীর প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের পথ আরও প্রশস্ত হবে। এছাড়াও, পাটশিল্পের সঙ্গে যুক্ত ৪০ লক্ষ কৃষকও এতে বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। দেশে তৈরি চটের ব্যাগের প্রায় ৮৫ শতাংশের যোগান দেওয়া হয় ভারতীয় খাদ্য নিগম (এফসিআই) এবং বিভিন্ন রাজ্যের খাদ্যশস্য সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলিকে। অবশিষ্ট চটের ব্যাগ বিদেশে রপ্তানি এবং সরাসরিভাবে বিপণনের ব্যবস্থা করা হয়।

সরকার প্রতি বছর আনুমানিক ১২ হাজার কোটি টাকার চটের ব্যাগ ক্রয় করে থাকে। মূলত, খাদ্যশস্য প্যাকেজিং-এর কাজে এই ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। দেশে প্রতি বছর পাটের ব্যাগের গড় উৎপাদন হল ৩০ লক্ষ গাঁট। পাট চাষের সঙ্গে যুক্ত কৃষক এবং পাটশিল্পের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত কর্মী ও পরিবারগুলির স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

Post a Comment

0 Comments