আরবি ভাষা বোঝা ও কথা বলা এখন আরও সহজ, শিক্ষক-পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ ড. সাইদুরের

সামান্য অক্ষর জ্ঞান থাকলে ৬-৭ মাসে যে কেউ অনর্গল আরবিতে কথা বলতে পারবেন। এমনটাই বিশ্বাস করেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান। এই নিয়ে একটি বইয়ের সিরিজ তিনি ছাত্রদের কাছে তুলে ধরছেন। আরও নানান কাজ করছেন এই অধ্যাপক। এ নিয়ে তাঁর বিশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেঙ্গল মিররের সম্পাদক আসিফ রেজা আনসারী।


🟥 আপনি দীর্ঘদিন অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত হঠাৎ করে আরবি ভাষা নিয়ে আপনার নতুন এই উদ্যোগটি কেন?
➡️ আরব দেশের থেকে আসলে আমাদের পড়ানোর ধরন আলাদা। আমাদের দেশে যেভাবে আরবি শেখানো হয় সেটা ভাষার প্রকৃত নিয়ম হিসেবে শেখানো হয় না। যেমন ইংরেজি ভাষা ইংরেজি মিডিয়ামে শেখানোর ধারণাআলাদা। আর পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি তাতে কোনও ছাত্র নিজের মতো করে আরবিতে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না। বর্তমানের 'গ্রামার অ্যান্ড ট্রান্সলেশন মেথড' অনেক পুরাতন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে পড়ুয়ারাআরবিতে কথা বলা কিংবা শোনার সুযোগ পায় না। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুবাদকৃত বই বাংলা ভাষায় পড়ানো হয়। তার জন্য আমি নতুন করে একটা উদ্যোগ নিয়েছি যাতে পড়ুয়ারা উপকৃত হয়। 




🟥 বর্তমানে আপনি একটা বইয়ের সিরিজ নিয়ে ছাত্রদের উৎসাহিত করছেন, বিষয়টা একটু খুলে বলুন। 
➡️ হ্যাঁ, সউদি আরবের একটি প্রকাশনা সংস্থা আল আরাবিয়া বাইনা ইয়াদাইকা নামে একটি বিশেষ বইয়ের সিরিজ নিয়ে এসেছে। অনারব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য এই বইটি লেখা। এই বইটি ১০-১৫ বছরের গবেষণার ফসল। সিরিজে মোট আটখানা বই রয়েছে। ছয় মাসের একটি বিশেষ কোর্স। আর এই বই পড়ানো কিংবা পড়ার জন্য একটি বিশেষ গাইডলাইন রয়েছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে কোনও একজন শিক্ষক যে বইটি ছাত্রদের পড়ালে তার ছাত্ররা সহজেই আরবিতে কথা বলা কিংবা মনের ভাব করার একটা সুযোগ পাবে। সাধারণ আরবি অক্ষরজ্ঞান থাকলেই এটা সম্ভব। 

🟥 যারা আপনার কাছ থেকে বই নেবে তাদের ট্রেনিং কিভাবে হবে, এ নিয়ে আপনি কি বলবেন? 
➡️ আপনি ঠিকই বলেছেন। যারা বইটি নিতে চান বা যেসব শিক্ষক ছাত্রদের পড়াতে আগ্রহী তাদের জন্য বিশেষ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করব। আমি সপ্তাহে দুই একদিন দুই তিন ঘণ্টার জন্য ট্রেনিং নিজে করিয়ে দিতে পারি। ইতিমধ্যে একটি বিশেষ ট্রেনিং সম্পন্ন হয়েছে। সউদি আরবসহ বিশ্বের যারা আরবি ভাষার উপর দক্ষ ব্যক্তি তাদের মাধ্যমে ট্রেনিং করানোর ব্যবস্থা করি। এই মুহূর্তে আমি অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ফলে আমি চাই আমাদের আরবি ভাষা ছাত্রছাত্রীরা আরও এগিয়ে যাক। তার জন্য যারা বই কিনে নিয়ে ছাত্রদের পড়াতে আগ্রহী এমন প্রতিষ্ঠান চাইলে আমাকে যাওয়া আসার খরচ বা সামান্য সাম্মানিক দিলেই আমি শনি রবিবার ছুটির দিনে সেখানে গিয়ে ট্রেনিং করাতে পারি। 



🟥 পড়ুয়া বা শিক্ষকদের মধ্যে কতটা আগ্রহ দেখছেন?
➡️ আপনি ছাত্রদের মধ্যে আগ্রহ তো ভালই দেখতে পাচ্ছি। ইতিমধ্যে প্রায় ৩০-৪০ জনের অর্ডার আমি পেয়েছি। বহু ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষককে বই দেওয়া হয়েছে। অনেকেই পড়া শুরু করে দিয়েছেন এবং ফল পাচ্ছেন। তাদের ফিডব্যাক শুনে ভালো লাগছে। এই পাঁচ হাজার টাকার একটি সেট যে কেউ জীবনে একবার খরচ করলে নিঃসন্দেহে আরবি ভাষা সাহিত্যকে সহজে আয়ত্ত করতে পারবে নিজের জীবনে বা তার কাছে কর্মক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

🟥 আরবি ভাষা পড়াশোনা করে কাজের জায়গা কোথায়? 
➡️  হ্যাঁ, আপনি ঠিক বলেছেন।অনেকেইএটা জানতে চান।আসলে আরবি ভাষা শিখে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ রয়েছে। হোটেল ম্যানেজমেন্ট, পর্যটন, ব্যাংকিং সেক্টর, বিভিন্ন বিশেষ কোম্পানি, সাংবাদিকতায় চাকরি সুযোগ রয়েছে। অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক প্রচুর আরবি ছাত্র-ছাত্রীকে এখন নিয়োগ দিচ্ছে।

🟥 তুলনামূলক আমাদের রাজ্যে আরবি ভাষা শিক্ষার অবস্থানটা কি রকম? 
➡️ আমাদের রাজ্য এ আরবি ভাষা বা সাহিত্য শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে। ছাত্র-ছাত্রীদের যেরকম আগ্রহ রয়েছে বা তাদের যা খিদে রয়েছে সেভাবে আমরা সেরাটা দিতে পারছি না। সার্বিকভাবে একটা সমস্যা রয়েছে। এর জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন, বাস্তব সমস্যাগুলোকে ভেবে সমস্ত শিক্ষকরা যৌথভাবে এগিয়ে এলে এই সমস্যা সমাধান হতে পারে বলে মনে হয়। আমি দেখেছি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া মিলিয়া কিংবা জহরলাল নেহেরুর বহু ছাত্র-ছাত্রী বিদেশে গিয়ে চাকরি পাচ্ছে আরবি ভাষা পড়ে। অবাক হয়ে যাবেন দিল্লি কিংবা জেএনইউ-এর ৮০ শতাংশ আরবি ভাষার ছাত্রছাত্রী অমুসলিম এবং তারা বিভিন্ন জায়গা ভালো চাকরি পাচ্ছে। ফলে আমাদের যারা রিসার্চ স্কলার বাএমএ ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র, তাদেরকে এ নিয়ে সিরিয়াস হওয়া দরকার। আমরা চাই আরও এগিয়ে যাক এবং এই আরবি ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র-ছাত্রীরা সমাজের প্রতিষ্ঠা পাক।

Post a Comment

0 Comments