বেঙ্গল মিরর ডেস্ক: হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয় কিন্তু হাতে পান যৎসামান্য পারিশ্রমিক। আর এরই বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ন্যায় চেয়ে পথে নামল মিড-ডে-মিল রন্ধনকর্মীরা। এ দিন কলকাতার রাজপথে তারা আন্দোলনে নামেন।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সরকারের মিড ডে মিল প্রকল্পের রন্ধনকর্মীদের প্রতি দীর্ঘ বঞ্চনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে রাজ্যের ৫টি সংগঠন যথাক্রমে ১. পশ্চিমবঙ্গ মিড-ডে মিল কর্মী ইউনিয়ন ২. পশ্চিমবঙ্গ সংগ্রামী রন্ধনকর্মী (মিড ডে মিল) ইউনিয়ন ৩. সারা বাংলা মিড-ডে মিল কর্মী ইউনিয়ন ৪. অ্যাসোসিয়েশন অফ মিড-ডে মিল অ্যাসিস্ট্যান্টস্ (আম্মা) ৫. পশ্চিমবঙ্গ স্বরোজগারী ও রাঁধুনি ইউনিয়ন একত্রিত হয়ে "মিড ডে মিল কর্মী ঐক্য মঞ্চ" গঠন করেছে। গত ১৯ ডিসেম্বর প্রেস কনফারেন্সের মধ্য দিয়ে রাজ্য সরকার ও রাজ্যবাসীর কাছে এই কর্মীদের সামগ্রিক অবস্থা ও দাবিগুলি তুলে ধরা হয়।
Photo credit; Natasha Khan |
সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, রা জ্যে এই মিড ডে মিল প্রকল্পের অধীনে প্রায় ২ লক্ষ ৩৩ হাজার পদ সৃষ্ট হয়েছে। কিন্তু এই ২লক্ষ ৩৩ হাজার পদ থাকলেও প্রতিটি পদের পিছনে এক বা একাধিক স্বনির্ভর গোষ্ঠী কাজ করার ফলে ৭ থেকে ৮ লক্ষ রন্ধনকর্মী সরকার অনুমোদিত বিদ্যালয়গুলিতে অতি স্বল্প মজুরিতে কাজ করছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প হলেও কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের যৌথ আর্থিক দায়িত্বে এই প্রকল্প চালানো হয়। ২০১৪ সালে দিল্লিতে ক্ষমতায় এসেই বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার প্রকল্পের বরাদ্দ ৭৫% থেকে কমিয়ে ৬০% করেছে এবং কেন্দ্রীয় সরকার সারা দেশে মিড ডে মিল রন্ধনকর্মীদের জন্য প্রতি মাসে ১০০০ টাকা মঞ্জুরি ১০ মাসের জন্য বরাদ্দ করেছে। এই ১০০০ টাকার মধ্যে ৬০০ টাকা কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার ৪০০ টাকা ও তার সঙ্গে অতিরিক্ত ৫০০ টাকা দিয়ে মোট ১৫০০ টাকা মজুরি ২০১৩ সাল থেকে এই রাজ্যের মিড ডে মিল কর্মীদের জন্য বরাদ্দ করেছে। কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকার গত ১০ বছর ধরে এই কর্মীদের প্রতি চরম বঞ্চনা করে চলেছে। দেশের বেশ কিছু রাজ্য সরকার তাদের রাজ্য তহবিল থেকে রন্ধনকর্মীদের অতিরিক্ত মজুরি এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মিড ডে মিল বাবদ অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করছে। যেমন, হরিয়ানা ৭০০০ টাকা মজুরি ও পোশাক বাবদ বছরে ৬০০ টাকা, কেরালা ৬০০ টাকা (দৈনিক) মজুরি ও ১৩০০ থেকে ২০০০ টাকা উৎসব ভাতা, পুদুচেরি ১২০০০ টাকা মজুরি, হিমাচলপ্রদেশ ৪০০০ টাকা মজুরি, কর্ণটিক ৪০০০ টাকা মজুরি ও ১০০০০০ টাকা ডেথ কম্পেশেসন ও ৩০০০০ থেকে ৫০০০০ টাকা এক্সিডেন্ট বেনিফিট, উড়িষ্যা ৩০০০ টাকা মজুরি, উত্তরাখণ্ডে ১০০০ টাকা উৎসব ভাতা ও ১০০০ টাকা পোশাক বাবদ, বিহারে ডেথ কম্পেন্সেশন ৫০০০০০ টাকা দেওয়া হয়।
অন্যদিকে ছাত্র-ছাত্রী পিছু সরকার নির্দেশিত বরাদ্দ ছাড়াও অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করে অন্ধ্রপ্রদেশে ৫ দিন ডিম ও প্রতিদিন মিষ্টি, কেরালাতে ১দিন ডিম ও ২দিন দুধ, কর্নাটকে ৪দিন ডিম এবং যারা ডিম খায় না তাদের কলা ও প্রত্যেকদিন মিষ্টি দেওয়া হয়। আমাদের রাজ্যের রন্ধনকর্মীদের ন্যূনতম মজুরী প্রদান ও ছাত্র-ছাত্রীদের সঠিক পুষ্টির প্রদানের উদ্দেশ্যে বরাদ্দ বৃদ্ধি করার জন্য রন্ধনকর্মী সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার মিড ডে মিল প্রকল্পের কোনো বরাদ্দ বাড়াচ্ছে না। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় কেন্দ্রীয় সরকার গত বাজেটে এই প্রকল্পের ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে।
এই কর্মীদের ১২ মাস কাজ করিয়ে অন্যায় ভাবে ১০ মাসের মজুরি নিতে বাধ্য করা হয়। এলাহাবাদ হাইকোর্ট বিগত ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে তার রায়ে মিড-ডে মিল কর্মীদের এই বেতনে কাজ করানোকে "বেগার খাটানো" আখ্যা দিয়ে সরকারের বেঁধে দেওয়া ন্যূনতম মজুরি প্রদান এবং একইসাথে ন্যূনতম বেতন হিসেবে প্রাপ্য বিগত ১৫ বছরের বকেয়াও মিটিয়ে দিতে আদেশ দিয়েছেন।
বর্তমান ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির বাজারে ছাত্র ছাত্রীদের দৈনিক বরাদ্দ (প্রথম-চতুর্থ শ্রেনী ৫.৪৭ টাকা ও পঞ্চম-অষ্টম শ্রেণী ৮.১৪টাকা)। ফলে এই প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য 'শিশুদের পুষ্টি' এক অর্থহীন কথা। তাই, শিক্ষাব্যবস্থাকে বাঁচাতে রন্ধন কর্মীদের মজুরি ও ছাত্র ছাত্রীদের দৈনিক বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি নিয়ে রাজ্যের রন্ধনকর্মীদের ৫টি সংগঠন জোটবদ্ধ হয়ে পথে নেমেছে।
মিড ডে মিল কর্মী ঐক্য মঞ্চের দাবি ১) অবিলম্বে রন্ধনকর্মীদের ২৬০০০ টাকা ন্যূনতম মজুরী দিতে হবে, যতদিন না তা দেওয়া হবে ততদিন রাজ্য সরকারের নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি দিতে হবে।২) ১০ মাসের বদলে ১২ মাসের মজুরি দিতে হবে। ৩) রন্ধনকর্মীদের সরকারি কর্মীর স্বীকৃতি ও পরিচয় পত্র দিতে হবে। ৪) বিদ্যালয়ের সকল ছাত্র ছাত্রীদের পুষ্টিকর রান্না করা খাবার নিশ্চিত করতে মাথাপিছু বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ৫) ব্যাঙ্ক একাউন্টের মাধ্যমে রন্ধনকর্মীদের মজুরি দিতে হবে। ৬) উৎসাবকালীন ভাতা ও সরকারি বিধিবদ্ধ ছুটি দিতে হবে। ৭) রন্ধনকর্মীদের মিড ডে মিল খাওয়ার আইনি অধিকার দিতে হবে।৮) মিড ডে মিল প্রকল্প বেসরকারিকরণ করা চলবে না। এন জি ও হাতে দেওয়া চলবে না।
0 Comments