সন্ত্রাস-দুর্নীতির স্বপক্ষে ভোট নাকি বিরোধীদের ছাপ্পা অভিযোগে জয় তৃণমূলের? একটি পর্যালোচনা

অর্পণ বন্দ্যোপাধ্যায় 

বিগত নির্বাচনগুলিতে এ কথা স্পষ্ট যে সাধারণ মানুষের আশীর্বাদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপক্ষেই রয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে ব্যাপক জয় এবং সদ্য সমাপ্ত উপনির্বাচনের ফলাফল বলেই দিচ্ছে যে ২০২৬ এ পুনরায় মহাকলেবরে ফের ক্ষমতায় আসতে চলেছে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মা-মাটি মানুষের সরকার। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায় যে পাহাড় প্রমাণ দূর্নীতির ধারক ও বাহক এই সরকার, তা সত্বেও প্রতিটি নির্বাচনে এই ফলাফল কেন? ইতিপূর্বে বাম আমলেও আমরা দেখেছি যে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ব্যাপকভাবে থাকলেও বড় নির্বাচন যেমন পৌরসভা, পঞ্চায়েত বা বিধানসভা তাতে কিন্তু মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ততোটা ঘটেনি। উপরন্তু বামফ্রন্ট সরকার গড়ে উঠেছে আপন মহিমায়। এর পিছনে কাজ করে শাসকদলের হাতের খেলা। ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে প্রশাসনকে নির্বাচনের অঙ্গনে বঙ্গবাসীর অলস মানসিকতা বা পরিবর্তনের ঝুঁকি না নেওয়ার প্রবণতাই কাজ করছে বিগত নির্বাচনের ফলাফলগুলিতে।

২০১১ সালে আমরা দেখেছিলাম যে বাম সাম্রাজ্যকে ভুলুন্ঠিত করে ক্ষমতায় আসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের সরকার। বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেসের ওপর আস্থা রাখে বঙ্গবাসী। কিন্তু বর্তমানে বহু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভয়াবহ হলেও নির্বাচনগুলিতে দেখা যাচ্ছে যে মানুষ আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিচ্ছে তৃণমূল সরকারকে। রাজনৈতিক মহল অবশ্য এর ব্যাখ্যা দিচ্ছে অন্যরকমভাবে। তাদের বক্তব্য যে বিজেপি যেভাবে গৈরিকীকরণ রাজনীতি শুরু করেছে, ধর্মের নামে জাতির নামে যেভাবে ভেদাভেদ করছে তা একেবারেই বাংলার শান্তিপ্রিয় মানুষ পছন্দ করে না। যার ফলে শক্ত কোনও বিরোধীদল না থাকায় বা সঠিক নেতৃত্বের অভাবের ফলেই মানুষ আস্থা রাখছে তৃণমূল কংগ্রেসের ওপর। একথা অনস্বীকার্য যে বাম-কংগ্রেস জোট মানুষ ভালোভাবে নেয়নি এবং বর্তমানে বাম আসন শূন্য হয়ে যাওয়ার কারণও এটি একটি। এই দুই দলের আঁতাত সাবেকি বামপন্থী ঘরানার ও সাবেকি কংগ্রেস ঘরানার সমর্থকেরা একেবারেই মেনে নিতে পারেনি। যার ফলে কুড়ো সত্য হলো এই যে বহু ক্ষেত্রেই বামের ভোট গিয়ে পড়ছে রামে এবং সাবেকি কংগ্রেস ভোটের সমর্থন পাচ্ছে বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেস। বামফ্রন্ট তথা সিপিআইএম সোশ্যাল মিডিয়ায় জনসমর্থন বৃদ্ধি করতে পারলেও সেই সমর্থনকে ভোট বাক্সে রূপান্তরিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর কারণ সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাব। তরুণ-তুর্কীদের ভোটের ময়দানে নামালেও সংগঠনের পরতে পরতে তরুন প্রজন্মের অভাব বাম দলগুলিকে বর্তমানে এই রাজনৈতিক শোচনীয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে।  এছাড়াও বিজেপির 'দলবদলুদের' আশ্রয় দেওয়ার প্রবণতা ও দল ভাঙিয়ে বাংলা রাজনীতিতে নিজের জায়গা করাকে সাধারণ মানুষ তথা যুবসমাজ ভালো মনে করে। সন্দেশখালি সহ বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে প্রভূত প্রচার করলেও জনসমর্থন ভোট বাক্সে নিয়ে আসতে পেরেছে তৃণমূল। আর তাই লোকসভা থেকে বিধানসভা উপনির্বাচন সবেতেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করছে শাসকদল এবং মসৃণ করছে ২০২৬ সালের 'বিধানসভা নির্বাচন' জয়ের রাস্তা।

Post a Comment

0 Comments