গঙ্গাপাড়ের আবর্জনা সাফাই করে পুরস্কৃত ‘পেহচান ফাউন্ডেশন’

আসিফ রেজা আনসারী

যে দেশে নদীকে মাতৃ-রূপে পূজা করা হয়, সেই ভারতেরই গঙ্গা নদীর পাড়ে পড়ে থাকে আবর্জনা। পূজ-পার্বণ বা অন্যান্য কাজের সময় গঙ্গার পাড়ে ফেলা হয় নানান জিনিসপত্র। শুধু তাই নয়, অনেকেই মদ্যপান করে কাচের বোতল ফেলে রাখে নদীর পাড়ে। এছাড়া প্লাস্টিক, ছেঁড়া কাপড়-চোপড় রোজই নদীর পাড় ও জলকে দূষিত করছে। গঙ্গার এই দূষণ রোধে অবশ্য কেন্দ্র সরকারের প্রকল্প রয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ তেমন হয় না। তাই টিটাগড়ের কয়েকজন যুবক, নিজেরাই উদ্যোগ নিয়েছিল নদীর পাড় তথা ঘাট পরিষ্কার করার। এই কাজে নজর কাড়ছে নেটিজেনদের। শুধু তাই নয়, দেশ-বিদেশের নানান সংস্থা থেকে পুরস্কারও ছিনিয়ে নিয়েছে মুহাম্মদ সিরাজ, আজহারুদ্দিনদের সংগঠন ‘পেহচান ফাউন্ডেশন’।

ট্রফি হাতে টিম পেহচান ফাউন্ডেশন 

জানা গিয়েছে, করোনার আগে শুরু হওয়া সেই কাজ রবিবার পা দিল ১৮০ সপ্তাহে। এই সংস্থার সদস্যদের কেউ ছোটখাটো কাজ করে, কেউবা স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করে। সবাই নিজের মতো করে রবিবার সকালে নিয়ম মেনে টিটাগড়ের গঙ্গার ঘাট পরিষ্কার করতে হাতে  হাত মেলায়। মেয়েরাও পুরুষদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে। রবিবারও দেখা গেল পীরঘাটে গঙ্গার পাড় থেকে কাচ বা প্লাস্টিকের বোতল, নাইলনের কাপড়, প্লাস্টিক যা দূষণ ছড়াতে পারে এমন অপচনশীল আবর্জনা তুলে প্রথমে ডাস্টবিনে জমা করা হয়। পরে সেগুলি পুরসভার নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা হয়।

চলছে পরিষ্কার করার কাজ 

কেন শুরু হয় এই কাজ? উত্তরে সংগঠনের প্রধান মুহাম্মদ সিরাজ বলেন, আমরা বিকালে ঘাটে এসে হাওয়া খেতে বা ঘুরতে আসলে দুর্গন্ধে থাকতে পারতাম না। নোংরা পড়ে থাকত। তারপর ভাবলান নিজেদের পরিবেশ নিজেদেরই পরিষ্কার রাখতে হবে। সেই থেকে শুরু। কারও বাধা এসেছিল? সিরাজের কথায়, বাধা তো ছিলই। মানুষ মনে করত আমরা হয়ত কোনও সম্প্রদায়ের নামে বদনাম ছড়াচ্ছি। পরে মানুষকে অনেকটা সচেতন করা গেছে। পুরসভা, স্কুল, , মন্দির-মসজিদ বা মাজার কমিটির লোকেদের বোঝতে সক্ষম হয়েছি। মানুষ ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে পরিবেশ ভালো রাখাও দরকার। 

তিনি আরও জানান, ইউএন-এর তরফেও কাজের প্রশংসা করা হয়েছে। দিল্লিতে ডেকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ২০২২ সালে। অন্যদিকে সম্প্রতি ইন্ডিয়া এনার্জি স্টোরেজ অ্যালায়েন্স-এর পক্ষ থেকেও সংগঠনকে পরিবেশ রক্ষার কাজে ভূমিকা পালনের জন্য বিশেষ পুরষ্কার দেওয়া হয়েছে।

Post a Comment

0 Comments