চলে গেলেন অধ্যাপক সিদ্ধার্থ গুহ রায়

বেঙ্গল মিরর ডেস্ক: অধ্যাপক ডক্টর সিদ্ধার্থ গুহ রায়, পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের অন্যতম প্রথিতযশা ও খ্যাতনামা অধ্যাপক। তথাকথিত ইতিহাসকে যারা ভালবাসতে শিখিয়েছিলেন তাদের মধ্যে সিদ্ধার্থ স্যার একজন। কোনদিন যে স্যারকে মাস্টার মশাই হিসেবে পাব এটা ভাবতেও পারিনি। দ্বাদশ শ্রেণিতে এসে প্রথম ভারতবর্ষ এবং ইউরোপের ইতিহাস পড়তে গিয়ে স্যারের বইয়ের সংস্পর্শে আসি, এরপর যখন আশুতোষ কলেজে ইতিহাস অনার্স নিয়ে পড়ছি তখন পাঠ্যবই হিসেবে স্যারের বই আমরা নিয়মিত পড়তে শুরু করি। পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদের অধিবেশনে প্রথমবার জাতীয় কংগ্রেস ও ইউরোপের বিভিন্ন রাজনৈতিক উত্থান পতন নিয়ে স্যারের একটি আলোচনা শুনি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছিলাম সেই আলোচনা। তারপর যখন স্নাতকোত্তর স্তরে ইতিহাস নিয়ে বিবেকানন্দ কলেজে ভর্তি হই  কি যত্ন সহকারে স্যার পড়াতেন। স্যার প্রকৃত অর্থেই ছিলেন ইতিহাসের সাধক, প্রত্যেকটি বিষয়ের যথাপযুক্ত নোট, কি নোট, বিশ্লেষণ  এবং অপূর্ব লেকচার ইতিহাসকে আরো ভালোবাসতে শিখিয়েছিল, এছাড়া ছিল স্যারের স্বভাব সিদ্ধ হাস্যকৌতুক, দেখতে দেখতে কখন যে দুটো বছর পেরিয়ে গেল বুঝতেও পারিনি। 


যেদিন ফেয়ারওয়েল নিয়ে বেরিয়ে আসছি কলেজ থেকে আমার এখনো মনে আছে, স্যার বলেছিলেন আমার এই ছাত্রটি একটু অগোছালো হলেও অনেক বড় হবে, লাস্ট সেমিস্টারে আমি ফার্স্ট ক্লাস পেলেও স্যার আমার উত্তর লেখায় খুশি ছিলেন না বলেছিলেন তুমি কমিউনিস্ট মতাদর্শের ছেলে, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের উত্তর এত সাদামাটা হবে কেন? প্রত্যুত্তরে স্যারকে বলেছিলাম আর কোনদিনও এই ভুল হবেনা, চেষ্টা করব নির্ভুল লেখার। এ তো গেল আমার কথা,  অধ্যাপক সিদ্ধার্থ গুহ রায় ছিলেন,

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাপক, তিনি নিজে দীর্ঘদিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তথা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস নিতেন এছাড়া তার সুযোগ্য ছাত্র-ছাত্রীরা রবীন্দ্রভারতী কলকাতা ও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপনা করেন, তার লেখা পুস্তক, তথা তার ট্রাম শ্রমিকদের সংগ্রাম নিয়ে লেখা পিএইচডি থিসিস আজও ইতিহাস সমাজের অহংকার।  এই মহান কর্মপুরুষ তার কর্মজীবন শেষ করেছেন  ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে এবং  কিন্তু কলম তার থামেনি শেষ অবধিও তিনি পুস্তক রচনা করেছেন, NCERT সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রয়াত ইতিহাসের অধ্যাপক হরি বাসুদেবন ও তার ছাত্রকে নিয়ে অহংকার পোষণ করতেন, কিন্তু শেষ জীবনে ফুসফুসের ক্যান্সার তাকে হার মানিয়ে দিল। তারাতলার একটি হাসপাতালে আজ ভোর বেলায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন এই মহান কর্মযোগি, ও অগণিত ছাত্র ছাত্রীর অভিভাবক অধ্যাপক ডক্টর সিদ্ধার্থ গুহ রায়, তিনি যে লোকেই থাকুন, ভালো থাকুন পরম পিতার কাছে এই কামনাই করি।

(লিখছেন অর্পণ বন্দ্যোপাধ্যায়) 


Post a Comment

0 Comments