এবার সম্ভব হবে 'অন্ধের হস্তি–দর্শন', আলিপুর চিড়িয়াখানায় চালু ব্রেইল–ব্যাজ

আসিফ রেজা আনসারী

অন্ধের হস্তি দর্শন বা অন্ধের হাতি দেখা একটি প্রাচীন প্রবাদ।শুধু ভারতীয় বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ কিংবা হিন্দু বা জৈনদের নানান লোককথার মধ্যেই নেই, এই গল্পটি বিভিন্ন দেশে নানাভাবে দেখতে পাওয়া যায়। প্রাচীন লোককথা মতে একদল অন্ধ মানুষ হাতি দেখতে গিয়েছিল। প্রতিটি অন্ধ মানুষ হাতির শরীরের বিভিন্ন আলাদাভাবে স্পর্শ করে, ফলে এক একজনের কাছে হাতি  এক এক রকম।ফলে তারা একে অপরকে সন্দেহ করে যে সে মিথ্যা কথা বলছে। তারা হাতাহাতিও শুরু করে দেয়। গল্পটির নৈতিকতা হল যে মানুষ তার সীমিত বিষয়গত অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে পরম সত্য দাবি করার চেষ্টা করে। 

এটা তো গেল প্রাচীন নীতিকথা। কিন্তু সম্প্রতি এই অন্ধ মানুষের হাতি দর্শনকে সম্ভব করে তুলছে ব্রেইল পদ্ধতি। এ বিশেষ পদ্ধতিতে দৃষ্টিহীন মানুষজন যেকোন বিষয় সম্পর্কে সহজেই জানতে পারবেন। এমনই বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি চালু হল কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানায়। যেখানে দৃষ্টিহীন মানুষজন বিশেষ ব্রেইল–ব্যাজে হাত দিয়ে জানতে পারবেন পশুপাখির খুঁটিনাটি তথ্য। রবিবার এক বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই পদ্ধতির সূচনা করে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। চিড়িয়াখানার এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী বিরবাহা হাসদা, আইএএস মনোজ কুমার  আগারওয়াল,আইএফএস নিরাজ সিঙ্ঘল, আইএফএস  সৌরব চৌধুরী, আলিপুরে চিড়িয়াখানার ডিরেক্টর শুভঙ্কর সেনগুপ্ত, ডেপুটি ডিরেক্টর ড. পিয়ালী চ্যাটার্জী । 

এক দৃষ্টিহীন ব্যক্তিকে ব্রেইল-ব্যাজের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন মন্ত্রী। ছবি সহায়তা রমিত 

জানা গিয়েছে, আপাতত জিরাফ, জলহস্তী, সিংহ,ময়ূর, হাতি মিলিয়ে মোট  ২০টা খাঁচার  সামনে এই ধরণের ব্রেইল ব্যাজ স্থাপন করা হয়েছে।  আলিপুর চিড়িয়াখানার জিরাফ মাঠে বৃক্ষরোপণ, ব্রেইল ব্যাজ  উদ্বোধন এবং শিম্পাঞ্জি পরিদর্শনের মাধ্যমে সেজে ওঠে রবিবারের বিশেষ অনুষ্ঠান।  পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে আশা প্রায় ৩০ জনেরও বেশি দৃষ্টিহীন মানুষকে চিড়িয়াখানার এই  ব্রেইল ব্যাজ সংযোজিত স্থান ঘুরিয়ে দেখানো হয়।  

এ নিয়ে চিড়িয়াখানার ডিরেক্টর শুভঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন , এতদিন দৃষ্টিহীন মানুষজন চিড়িয়াখানায় এসে শুধু পশুপাখিদের আওয়াজ শুনতেন। এই  দৃষ্টিহীন মানুষদের উদ্দেশে  আমরা ব্রেইল ব্যাজ উদ্বোধন করলাম। আমরা ইন্টারন্যাশনাল আই ব্যাংকের কাছে কৃতজ্ঞ। তাদের সহযোগিতায়  এই কাজ করা সম্ভব হল।  এদেশের কোনও চিড়িয়াখানায় এই সুবিধা এখনও পর্যন্ত নেই। আমরাই প্রথম দৃষ্টিহীন মানুষকে পশুপাখির সঙ্গে পরিচিত করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। অন্যদিকে বীরবাহা হাসদার কথায়, সমস্ত মানুষ সমান, প্রতিটা মানুষকে একে ওপরের হাত ধরে এগিয়ে যেতে হবে। এই চিড়িয়াখানাতেও সমস্ত মানুষদের জন্য সমান এবং সবকিছু  সুবিধা থাকার প্রয়োজন আছে মনে করে বা দৃষ্টিহীন মানুষদের কথা ভেবে আলিপুর চিড়িয়াখানার এই উদ্দ্যোগে আমি খুব গর্বিত।

Post a Comment

0 Comments