আসিফ রেজা আনসারী
তিলোত্তমার খুনি ও ধর্ষকের উপযুক্ত শাস্তি চাইছেন মহিলারা। নারী-পুরুষ, দল-মত নির্বিশেষে এ নিয়ে সোচ্চার হয়েছে। শুধু তাই নয়, আরজিকর-কাণ্ডের পর রাজ্যজুড়ে মেয়েদের নিরাপত্তার দাবিও জোরালো হচ্ছে।এরই মধ্যে রাজ্য সরকার মহিলাদের নিয়ে বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করেছে। রাতের সাথীর নামে যে ফরমান জারি করেছে সরকার তার মধ্যে লিঙ্গ-বৈষম্য দেখছেন চিকিৎসক, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা।
কর্মস্থলে মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য এবং যেকোনো ধরনের যৌন নির্যাতন রুখতে প্রায় দুই দশক আগে আইন প্রণীত হয়েছে। শুধু তাই নয়, সময় পালটানোর সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে নানান অধিকার। কিন্তু রাজ্য সরকার মেয়েদের সেই অধিকার না দিয়ে জোর করে ঘরে রাখার পক্ষপাতী বলে প্রশ্ন উঠছে। যতটা সম্ভব রাতের বেলায় মেয়েদের কোনও ডিউটি যাতে না দেওয়া হয় এমন কথাই বলেছে রাজ্য। এখানেই আপত্তি তুলেছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর।
এই সংগঠনের তরফে বলা হয়েছ, নাইট ডিউটি না দেওয়ার নাম করে মহিলাদের কাজের অধিকার সংকোচনের চিন্তাকে ধিক্কার জানাচ্ছি। সাধারণ মানুষের কাছে সংগঠনের আর্জি, কাজের জায়গায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে মহিলাদের কাজের সুযোগ কেড়ে নেওয়ার ভয়ংকর চিন্তার বিরোধিতা করুন। নারী পুরুষের সমানাধিকারের লড়াইকে পিছন দিকে নিয়ে যাবার চেষ্টার বিরোধিতা করুন।একইসঙ্গে চিকিৎসক সংগঠনের তরফে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হয়েছে। রাজ্য সরকার চিকিৎসক ও মহিলা কর্মীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে একাধিক পদক্ষেপ করেছে। কিন্তু এর মধ্যে খামতি দেখছেন চিকিৎসকরা। শুধু তাই নয়, লিঙ্গ-বৈষম্যও দেখছেন তাঁরা। এ নিয়ে সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. সজল বিশ্বাস জানান, মহিলা ডাক্তার বা কর্মীদের নাইট ডিউটি না দেওয়া নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত ঠিক নয়। তিনি মনে করছেন, নির্দেশিকার মাধ্যমে সরকার লিঙ্গ-বৈষম্য ঘটিয়েছে। তাঁর দাবি, কর্মস্থলে যথার্থ নিরাপত্তাব্যবস্থা সুনিশ্চিত করলেই হয়। তাহলে আর নাইট ডিউটি অফ করার প্রয়োজন হবে না। অন্য এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাসপাতালে নিরাপত্তা পরীক্ষা বা যন্ত্র বসিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ও চিকিৎসাকর্মীদের চেক করার বিষয়টি প্রায় অসম্ভব। একটি হাসপাতালের একেবারে অন্দরমহলে ডিউটি-রুমে কর্তব্যরত একজন মহিলা চিকিৎসক যখন নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও খুন হয়ে যেতে পারে, সেখানে এসব আয়োজন কতটা কাজে লাগবে তা নিয়েও সন্দেহ আছে।
0 Comments