ধর্ষণ, দুর্নীতি, আর্থিক কেলেঙ্কারি: পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যত নিয়ে একটি পর্যালোচনা

অর্পণ বন্দ্যোপাধ্যায়

উৎসব না উৎশব এই বিতর্ক যখন পশ্চিমবঙ্গজুড়ে বিদ্যমান, ঠিক তখনই আবার ঘটে গেল একটি ধর্ষণের ঘটনা। এবারের শিকার এক চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। রাজ্যজুড়ে মুখ্যমন্ত্রী যখন দেবীবন্দনা করে বেড়াচ্ছেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিয়ে ভোটবাক্সে তার লাভ তুলছেন, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের এই অবস্থা ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও বিশ্ববাজারে রাজ্যের ভাবমূর্তি যথেষ্ট পরিমাণে কলুষিত করছে বলে অর্থনৈতিক ও সমাজবিজ্ঞানমহল মনে করছে।

পরিবর্তন মানুষ চেয়েছিল এ কথা শতকরা ১০০ ভাগ সত্য। ৩৪ বছরের বাম সরকারের জগদ্দল পাথরকে সরিয়ে মানুষ যে একটি নতুন সরকার প্রত্যাশা করেছিল, এ ব্যাপারে কোনভাবেই সন্দেহ নেই। কিন্তু বদলা নয় বদল চাই–এর স্লোগান দিয়ে যে সরকার ক্ষমতায় এলো তার জন্মলগ্ন থেকে দুর্নীতি যেন এই সরকারের সাথে সমার্থক হয়ে উঠলো।


সারদা কেলেঙ্কারি, রেশন দুর্নীতি, সিন্ডিকেট রাজ, শিক্ষা দুর্নীতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস, পৌরসভা ও বিভিন্ন সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি, সততার প্রতীক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি যে নষ্ট করছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পুলিশ–প্রশাসন যে দলদাসে পরিণত হয়েছে, তা বিগত কয়েকটি ঘটনা দেখলে বোঝা যায়। যেভাবে জয়নগরকাণ্ডে সংসদ বিধায়কের বিরুদ্ধে মানুষের জনরোষ দেখা যাচ্ছে তা আগামী নির্বাচনগুলিতে তৃণমূলের ফলাফলে যথেষ্টই প্রভাব ফেলবে বলে রাজনৈতিকমহল মনে করছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পৌরসভা, বিধানসভাভিত্তিক পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে যে তৃণমূলের তুলনায় বিরোধী দলগুলি অনেকটাই এগিয়ে।কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডগুলিতে দেখা যাচ্ছে যে তৃণমূলের অবস্থা রাজনৈতিকভাবে যথেষ্টই ব্যাকফুটে। বিশেষত শিক্ষা দুর্নীতি ও সাম্প্রতিক আরজিকর–কাণ্ড মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে যথেষ্ট পরিমাণে টলিয়ে দিয়েছে। এছাড়াও এই কাণ্ডে ঘৃতাহুতি প্রদান করল জয়নগরের ঘটনা। আরজিকর–কাণ্ডের পর পুলিশ–প্রশাসন যে কোনভাবেই নারী নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়নি তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। পশ্চিমবঙ্গের নারী থেকে বেকার যুবক-যুবতীদের চাকরি, কোনও কিছুই যে সুরক্ষিত নয়, তা এখন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে। তাই আগামী নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। মানুষের মনের ভেতর থেকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের অপসারণ করা, সেই ক্ষোভের অপসারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার স্বভাব সিদ্ধ রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দিয়ে করবেন, নাকি ভরসা করবেন সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর তা সময় বলে দেবে। তবে আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতিতে যে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হওয়ার সঞ্চারিত হতে শুরু করেছে, তার তৃণমূল কংগ্রেস উপেক্ষা করতে পারবে না। এবং আগামীদিনে এই হওয়ার সুযোগ নিয়ে পরবর্তী নির্বাচনগুলিতে বিরোধীদলগুলিও আপন শক্তি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে বলে রাজনৈতিকমহল মনে করছে।

লেখক– সহশিক্ষক, শ্রী সংস্কার অ্যাকাডেমি (মধ্যপ্রদেশ)



Post a Comment

0 Comments