বিশেষ প্রতিবেদন: জীবনের ৮৬ বসন্ত পেরিয়ে অনন্তলোকে পাড়ি জমালেন বর্ষিয়ান নাট্যকার ও অভিনেতা মনোজ মিত্র। মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে কলকাতার একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে। মনোজ মিত্র তার প্রথম নাটক ‘মৃত্যুর চোখে জল’ লেখেন ১৯৫৯ সালে। কিন্তু ১৯৭২-এ ‘চাক ভাঙা মধু’ নাটকের মাধ্যমে তার খ্যাতি এবং পরিচিতি গড়ে ওঠে। ওই নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছিলেন বিভাস চক্রবর্তী। তার প্রতিষ্ঠিত নাট্যগোষ্ঠীর নাম ‘সুন্দরম’।
বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনেও তুমুল জনপ্রিয় মনোজ মিত্র। তার লেখা 'কিনো কাহারের থেটার' নাটকটি নিয়মিত মঞ্চায়ন করছে ঢাকার নাট্যদল প্রাচ্যনাট। চট্টগ্রামের নাট্যদল ফেইমও অসীম দাশের নির্দেশনায় এ নাটকটি মঞ্চস্থ করছে।বাংলাদেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ থেকে মঞ্চে এসেছে মনোজ মিত্রের লেখা একাধিক নাটক। এর আগে অসুস্থতা নিয়ে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মনোজ মিত্র। পুজোর আগে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, কার্ডিওজেনিক শক-এ রয়েছেন অভিনেতা। সোডিয়ামও পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়ায় রক্তচাপও নেমে গিয়েছিল অভিনেতার। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেও শেষরক্ষা হল না।
১৯৩৮ সালের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের খুলনায় জন্ম। দেশভাগের পর বসিরহাটের স্কুলে পড়াশোনা। স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শনে স্নাতকের পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন মনোজ মিত্র। সত্যজিৎ রায়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, তরুণ মজুমদারের সঙ্গে একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন মনোজ মিত্র। তপন সিংহের 'বাঞ্ছারামের বাগান' ছবিতে তাঁর অনবদ্য অভিনয় আজও সমানভাবে দর্শকদের মনে দাগ কাটে।
১০০-রও বেশি নাটক লিখেছেন মনোজ মিত্র। প্রথম নাটক লেখেন কলেজ জীবনে। ১৯৭২-এ চাক ভাঙা মধু নাটকে আত্মপ্রকাশ মনোজ মিত্রের। এরপর একের পর এক কালজয়ী নাটকের রচনা করেন মনোজ মিত্র। ১৯৮৫ সালে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কারে সেরা নাট্যকারে ভূষিত হন তিনি। ২০০৫ সালে এশিয়াটিক সোসাইটির স্বর্ণপদকে ভূষিত করা হয় তাঁকে। মনোজ মিত্রের প্রয়াণে চোখে জল চলচ্চিত্র ও থিয়েটার জগতের।
0 Comments