আসিফ রেজা আনসারী
বিশিষ্ট ধর্মগুরু, সন্ন্যাসী ও বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নেতা চিন্ময় মহাপ্রভুকে বহিষ্কার করল বাংলাদেশ ইসকন। এর আগে তার বিরুদ্ধে শিশুদের উপর যৌন নিপীড়নসহ নানান অভিযোগ ওঠে। এমনকি তিনি দেশবিরোধী কাজ করেছেন বলে অভিযোগ। বর্তমানে তিনি জেলে রয়েছেন। তার গ্রেফতারের প্রতিবাদে বাংলাদেশ এবং ভারতজুড়ে চলছে আন্দোলন এরই মধ্যে চিন্ময়কে বহিষ্কার করল বাংলাদেশ ইসকন।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির দৈনিক ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন উদ্ধৃত করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুরেই সাংবাদিক বৈঠক করে সে দেশের ইসকনের নেতারা জানিয়েছেন, চিন্ময়ের কোনও কাজের দায় ইসকন নেবে না। বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ ঢাকার স্বামীবাগে ওই সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করেছিল ইসকন বাংলাদেশ। সেখানেই ইসকনের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ‘‘মাস কয়েক আগেই শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস, সদস্য গৌরাঙ্গ দাস এবং চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বহিষ্কার করেছে ইসকন বাংলাদেশ। তাই তাঁর কোনও রকম বক্তব্য কিংবা কার্যকলাপের দায় ইসকনের নয়।’’
সাংবাদিক বৈঠকের প্রশ্নোত্তর পর্বে ইসকন বাংলাদেশের কার্যনির্বাহী কমিটি ও শিশুসুরক্ষা দলের সদস্য হৃষীকেশ গৌরাঙ্গ দাস জানান, চিন্ময়ের বিরুদ্ধে কয়েক জন শিশু হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন। অভিযোগের ভিত্তিতে চিন্ময়কে চিঠি দিয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়। তদন্তের স্বার্থে তিন মাসের জন্য পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ পদ থেকেও তাঁকে সরে দাঁড়াতে বলা হয়। কিন্তু তিনি নির্দেশ মানেননি। এর পরেই গত জুলাই মাসে চিন্ময়কে বহিষ্কার করে ইসকন। গত ৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক ভাবে বিবৃতি দিয়ে তা জনসমক্ষে জানিয়েও দেয় ইসকন। ইসকনের কার্যকর্তাদের আরও দাবি, বাংলাদেশে চিন্ময়ের গ্রেফতারি এবং আইনজীবীর হত্যাকে কেন্দ্র করে ইসকনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। অনেকে বলছেন, আইনজীবীকে খুনের ওই ঘটনায় ইসকন ও তার সমর্থকদের হাত রয়েছে। কিন্তু এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে আদতে ইসকনের কোনও সম্পর্ক নেই।
আর এপার বাংলায় বিজেপির আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিভিন্ন গণসংগঠন এবং মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ করছেন, বাংলাদেশ হোক কিংবা ভারত যে কোনও দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও যেন প্রশ্ন না ওঠে। যেকোনো উপায়ে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে বলে দাবি উঠছে। একদিকে যখন ভারতের বিভিন্ন জায়গায় মসজিদে বুলডোজার চালানো হচ্ছে, প্রায় ৭০০-র কাছাকাছি গির্জা ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সেখানে বিজেপি কোন মুখে আন্দোলন করছে প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকার কর্মী ছোটন দাস। বাংলাদেশে দ্রুত শান্তি ফেরানোর কথা বলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বিষয়টি যেহেতু পররাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন তাই ভারত সরকারের দিকেই তাকিয়ে রাজ্য প্রশাসন।
রাজ্য রাজ্য প্রশাসন সবসময় কেন্দ্রের পাশে থাকবে বলেও বিধানসভায় জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর এই বলে প্রায় কুপোকাত বিজেপি শিবির। সিপিএমের তরফেও ঘটনার কড়া নিন্দা জানানো হয়েছে। বিজেপি ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ করেন মুহাম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, বাংলাদেশ হলে আন্দোলন করব, আর এবার হলে চুপ থাকব, এই দ্বিচারিতা বিজেপির কাছেই মানায়। শান্তির বার্তা দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা অধ্যাপক প্রদীপ ভট্টাচার্য।
0 Comments