জাহানারা খাতুন
কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্য হলুদ ট্যাক্সি। বহু বছরের এই আকর্ষণ আজ বিলুপ্তির পথে। পরিবেশের স্বাস্থ্য এবং নাগরিক জীবনের আধুনিকীকরণের কথা মাথায় রেখে ১৫ বছরের বেশি পুরোনো প্রায় ২,৫০০ ট্যাক্সিকে রাস্তায় নামার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে সরকারি তরফে। ফলত উদ্বেগের মুখে হলুদ ট্যাক্সি চালক, ইউনিয়ন এবং নাগরিকরাও। এতে কেবল আর্থিক সংকটই নয়, বরং সাংস্কৃতিক প্রতীক হারানোর সম্ভাবনা সম্পর্কেও সতর্ক করেছেন সচেতন শহরবাসী।
এই প্রেক্ষাপটে সেই সমস্যার উপায় খুঁজতে আসরে নামলেন গীতিকার, লেখক, কবি এবং আবৃত্তিকার ঝর্ণা ভট্টাচার্য। আই কমিউনিকেশনস-এর সহযোগিতায় 'হারানো সুরে হলুদ ট্যাক্সি' নামে এক আলোচনাসভার আয়োজন করেন তিনি। বুধবার ঝর্ণা ভট্টাচার্যের পাশাপাশি এই আলোচনাসভায় অংশ নেন শান্তি দাস, আইপিএস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় রাজ্যপালের এডিসি (পি), কলকাতা হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চ্যাটার্জি, চলচ্চিত্র পরিচালক, লেখক ও অভিনেতা দেবপ্রতীম দাশগুপ্ত, রাজনৈতিক কর্মী শতরূপ ঘোষ, আই কমিউনিকেশনসের অ্যাডভাইজার সৌম্যজিৎ মহাপাত্র, অভিনেতা সুজয় রুদ্র, গীতিকার, সুরকার ও গায়ক অনুভব মাইতি প্রমুখ।
Image by source |
হলুদ ট্যাক্সির পুরাতন ঐতিহ্য এবং সরকারের সিদ্ধান্তের আগামী প্রভাব নিয়ে বক্তারা তাঁদের মতামত ভাগ করে নেন। তাঁরা এই সাংস্কৃতিক প্রতীক সংরক্ষণের গুরুত্ব, ট্যাক্সি ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের জীবিকা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং আধুনিকীকরণের সঙ্গে ঐতিহ্য সংরক্ষণের ভারসাম্য রক্ষার বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করেন।
হলুদ ট্যাক্সি চালক এবং যাত্রীদের ব্যক্তিগত কিছু গল্প ও অভিজ্ঞতাগুলিও তুলে ধরা হয় এই অনুষ্ঠানে। উঠে আসে বহু পুরনো এই যানের সঙ্গে ঐতিহ্যের এক অন্তরঙ্গ দৃষ্টিভঙ্গি। এছাড়া আয়োজিত হয় কলকাতার হলুদ ট্যাক্সির যাত্রাপথ নিয়ে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীরও। তা অনুষ্ঠানে নস্টালজিয়ার ছোঁয়া যোগ করে, তুলে ধরে শহরের গৌরবময় ইতিহাসকে।
আইপিএস শান্তি দাস বলেন, 'এই অনুষ্ঠান হলুদ ট্যাক্সির সাংস্কৃতিক গুরুত্ব এবং কলকাতার অনন্য ঐতিহ্য সংরক্ষণে এক দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করেছে। সমাধান খোঁজার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তাঁদের এই প্রয়াস প্রশংসাযোগ্য।
প্রসঙ্গত, কলকাতার রাস্তায় প্রথম হলুদ ট্যাক্সি চলাচল শুরু হয় ১৯০৮ সালে, খরচ ছিল প্রতি মাইলে ৮ আনা (৫০ পয়সা)। ১৯৬২ সালে কলকাতা ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন অ্যাম্বাস্যাডরকে স্ট্যান্ডার্ড ট্যাক্সি মডেল হিসেবে গ্রহণ করে এবং ভারতের রাস্তার জন্য এর টেকসই প্রভাব উল্লেখ করে। হলুদ রঙটি যেহেতু রাতের বেলাও ভীষণভাবে দৃশ্যমান, সেই কারণেই এই রঙটি নির্বাচিত হয়। সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী ছিলেন কলকাতার প্রথম হলুদ ট্যাক্সি চালক, যিনি ১৯৩২ সালে পারমিট পান। ২০০৯ সালে শেফালী রায় কলকাতার প্রথম নারী হলুদ ট্যাক্সিচালক হিসেবে পথে নামেন। গবেষণায় দেখা গেছে, হলুদ ট্যাক্সির সংখ্যা ২০২০ সালে ১৮,০০০ থেকে বর্তমানে ৬,০০০ এ নেমে এসেছে। বিশেষত কোভিড পরিস্থিতির পর, সংখ্যা বহুলাংশে কমতে থাকে।
0 Comments