ধর্মে মুসলিম হওয়ায় এক যুবককে ট্রেন থেকে ফেলে মারার চেষ্টার অভিযোগ, সরব নাগরিক সমাজ

বেঙ্গল মিরর ডেস্ক: ধর্মে মুসলিম হওয়ায় এক ট্রেন যাত্রীকে শারীরিক ও মানসিক হেনস্থা করে রীতিমতো ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। আর এই অভিযোগকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় শুরু হয়েছে। আজ বুধবার বেশ কিছু সমাজকর্মী শিয়ালদহ জিআরপি থানায় ডেপুটেশন দেবে বলে খবর জানা গিয়েছে। 

জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে প্রায় পৌনে নটার দিকে ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হন রেজাউল ইসলাম বলে এক যুবক। অল্পের জন্য হিন্দুত্ববাদীদের হাত থেকে বেঁচে ফেরেন তিনি। সকাল 8.45 গেঁদে-শিয়ালদা লোকালে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। সাথে কিছু লাগেজ ও ট্রলি ছিল। লাগেজ বাঙ্কারের রেখেছিলেন। রানাঘাট স্টেশন থেকে ট্রেনে প্রচুর ভিড় জমতে শুরু করে। সবাই ডেলি প্যাসেঞ্জার। উঠেই দাড়ি টুপি পরিহিত রেজাউলকে দেখে ১০ ১২ জন অকথ্য ভাষায় সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক গালাগাল শুরু করে। অভিযোগ, রেজাউল কথা বলতে গেলেই শুরু হয় প্রচন্ড মারধর। দাড়ি, টুপি, গলার রুমাল টেনে ছিঁড়ে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে চলতে থাকে কিল, ঘুসি,চড়। মাথার চুল, দাড়ির টেনে ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। এরপর সিট থেকে টেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা হয়। তবে কিছু যাত্রীর‌ বাধায় সেটা সম্ভব হয়নি। নদিয়ার পায়রাডাঙা থেকে মদনপুর এই চার স্টেশনের মধ্যে এই ঘটনা ঘটে।

বিহার উত্তরপ্রদেশে এমন ঘটনার মতো পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের মধ্যে জাতিগত বিদ্বেষজনিত হেনস্থার ঘটনা নিয়ে অনেকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী তাঁর প্রক্রিয়ায় লেখেন, এই ঘটনা কোনও ব্যতিক্রমী বিষয় নয়। এই রাজ্যে ইতিপূর্বে এইধরণের ঘটনার কথা আমরা গণমাধ্যমের মারফত জানতে পেরেছি। সমাজমাধ্যমের প্লাটফর্মগুলিতেও ছড়িয়ে যাচ্ছে এইধরণের ঘটনার কথা। কিন্তু এইরাজ্যের সরকারের কোনও হুঁশ নেই। রেজাউল ইসলামের অপরাধ কি? তাঁর দাড়ি আছে, মাথায় টুপি পরে আছেন, এটাই কি তাঁর অপরাধ? তাতেই তাঁকে জঙ্গী তকমা দিয়ে শারিরীকভাবে লাঞ্ছনার শিকার হতে হবে? তাঁকে গালাগাল দিতে হবে? দেশজুড়ে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার যে চরম সাম্প্রদায়িক গরল উগরে চলেছে, যে ঘৃণার চাষ করে চলেছে, সেটা থেকে এই বাংলার মাটিও রেহাই পাচ্ছে না। এই রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারও এই বিষয়ে একপ্রকার মদত দিয়ে চলেছে। মুসলিমদের "ক্যাপটিভ ভোট ব্যাঙ্ক" হিসেবে ব্যবহার করে এই দল কিন্তু তাদের হিন্দুত্ববাদীদের চরম সাম্প্রদায়িক আক্রমণের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। মূলধারার গণমাধ্যমের একাংশও এই ঘৃণা ছড়ানোর কাজে ধারাবাহিকভাবে ইন্ধন দিয়ে চলেছে। সেই জন্য রেজাউল ইসলামের মতন মানুষগুলি ট্রেনে-বাসে, রাস্তা-ঘাটে আকছার হেনস্থার শিকার হচ্ছেন, লাঞ্ছিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ট্রেনের ভেতর যখন এইধরণের ঘটনা ঘটছে তখন রেল কর্তৃপক্ষও নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে না। রেল পুলিশকেও তৎপরতার সঙ্গে এই ঘটনার মোকাবিলা করতে হবে ও অপরাধীদের গ্রেফতার করতে হবে।

অন্যদিকে, এসডিপিআই-এর রাজ্য সহ-সভাপতি তাইদুল ইসলাম বলেন, গেঁদে-শিয়ালদা লোকাল ট্রেনে সাম্প্রদায়িক হামলা বিজেপি নেতা মন্ত্রীদের সাম্প্রদায়িক ভাষণের ফল। এটি নিছক একটি ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, বরং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর উদ্দেশ্যে পরিচালিত একটি ঘৃণ্য কার্যকলাপ। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। একইভাবে সরব হয়েছে বিশ্বকোষ পরিষদ।

ওই যুবকের বাড়ি হুগলি জেলার হরিপাল এলাকায়। তিনি আক্রান্ত হওয়ার পর মাঝপথে দমদম স্টেশনে নেমে যান। সেখান থেকে ডানকুনি লোকাল ধরে বাড়ি ফিরেছেন মধ্যরাতে। 

Post a Comment

0 Comments