আসিফ রেজা আনসারী
শহর কলকাতার একটা পুরানো ইতিহাস রয়েছে। শুধু তাই নয়, রয়েছে মুসলিমদের ঐতিহ্যও। বর্তমান সময়ে উর্দুভাষীদের আধিক্য থাকলেও একটা সময় ব্যবসা-বাণিজ্যে বাঙালি মুসলিমদের সমান হিস্সা ছিল। সেসব অবশ্য অতীত। বিশেষ করে দেশভাগের পর বাঙালি মুসলিমরা শহর কলকাতায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যান। যেসব এলাকা থেকে মুসলিমদের ইতিহাস প্রায় মুছে গিয়েছে সেসব এলাকার মধ্যে অন্যতম মধ্য-কলকাতার বেলেঘাটা। বর্তমানে এই এলাকায় বেশ কিছু মুসজিদ অক্ষত থাকলেও বহু বাড়ি-ঘর, মসজিদ-মাজার দখল হয়ে গিয়েছে। অনেক জায়গায় আবার গম্বুজ বা কবরের জায়গাটুকু বেঁচে আছে। শনিবার বেলেঘাটা এলাকা ঘুরে তারই সন্ধান করা হয়।
ইতিহাস বলছে, কলকাতার ভিত্তি বিনির্মাণে মুসলিমদের বড় ভূমিকা ছিল। বহু লেখালেখিতে উঠে এসেছে যে, মন্দির-মসজিদ নির্মাণের জন্য মুসলিম শাসক ও জমিদাররা জায়গা-সম্পত্তি দান করেছেন। ছাত্রীনিবাস তৈরি করেছিলেন বেগম সাওলাতুন্নেসা। এই মহয়সী নারী বর্তমান উত্তর ২৪ পরগনার ভাসিলিয়া গ্রামের জমিদার মুন্সী এজবাতুল্লার মেয়ে। বেলেঘাটা এলাকার বিখ্যাত জমিদার মুন্সী লতাফত হোসেন ছিলেন তাঁর স্বামী। আজও মুন্সী লতাফত হোসেন রোড সেই স্মৃতি বহন করছে। দেখা গেল, এই এলাকায় আজ মুসলিম বসতি নেই। মানুষজন লতাফত হোসেন রোড নাম দেখে মুসলিম এলাকা ছিল বললেও সেই মানুষটির সম্পর্কে কিছুই বলতে পারছেন না। তবে বয়স্ক কিছু মানুষ জানান, আগে বসতি ছিল তাঁরা জানেন।
![]() |
এখানে কেবল জুম্মার নামায হয় |
অন্যদিকে, শিয়ালদহ থেকে বাইপাস যাওয়ার প্রায় শেষ প্রান্তে জোড়ামন্দির স্টপেজের কাছে ১০০ বেলেঘাটা মেন রোডের উপর রয়েছে একটি পুরানো মসজিদ। জানা গেল, রাজ্য ওয়াকফ বোর্ড কর্তৃক একজন ইমাম রাখা হয়েছে তবে নামায হয় না বললেই চলে। শুক্রবার ২০-২৫জনের জুম্মার নামায হয়। একটিমাত্র গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের পাশে মাজার আছে তবে সেটা বাদে সব জায়গা দখল হয়ে গিয়েছে। মসজিদে যাওয়ার জন্য কেবল সরু গলি আছে।
ইমাম একরামুল হক জানান, এই হাক্কানি মসজিদে তিনি ৩০ বছর ধরে এখানে আছেন। আশেপাশের লোকজন নোংরা করে রেখেছে। প্রস্রাবের গন্ধ ও আবর্জনার স্তুপও দেখা গেল। তারপর শিয়ালদহের দিকে একটু এগিয়ে এলে রয়েছে খোদাগঞ্জ রোড। এই রোডের উপরে রয়েছে একটি মাজার। ৭/১ খোদাগঞ্জ রোডের এই মাজারের ফলকে লেখা আছে, হজরত মাওলানা মিসকিন আলি শাহ চিরাগের খলিফা হজরত খাজা শাহ সাফাতুল্লাহ কুতুব আলম চিসতি, হজরত খাজা সৈয়দ মাওলানা শাফায়েতুল্লা শাহ চিসতি এবং হজরত খাজা সৈয়দ মাওলানা মুহাম্মদ ইবরাহিম শাহ চিসতির মাজার রয়েছে। খাদেম থাকেন না। বছরে একবার উরস হয়। স্থানীয়রা মাজার ও পুকুর বাদে সব দখল করে নিয়েছে বলে জানা গেল। এরই পাশে ৪-১ খোদাগঞ্জ রোডে রয়েছে আর একটি মসজিদ। পাঁচ ওয়াক্ত নামায হয়। রমযানে ইফতার, তারাবিহ ইত্যাদির পাশাপাশি প্রতিদিন শিশুদের জন্য মক্তব চালু আছে বলে জানান মুতাওয়াল্লি শেখ আনোয়ার হোসেন। ওয়াকফ বোর্ডের অধীন এই সম্পতি তিনবিঘা পরিমাণ হলেও সব দখল হয়ে গিয়েছে। কেউ ভাড়া দেয়, তবে ওয়াকফ বোর্ডের তরফে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেই বলে জানান ইমাম হাফিজ শাকিল আহমেদ ও মুতাওয়াল্লি শেখ আনোয়ার হোসেন।
![]() |
সত্যপীরের মাজার যেখানে পূজো হয় |
অন্যদিকে ১৯/১/এ বেলেঘাটা মেন রোডে অবস্থিত করিমুন নেশা বিবি মসজিদে কেবল শুক্রবার জুম্মার নামায হয়। বেলেঘাটা দেশবন্ধু বাস স্ট্যান্ডের পাশে মসজিদে শনিবার আসরের নামাযের সময় তালা দেওয়া ছিল। স্থানীয় এক দোকানদার জানান, মুসলিম বসতি নেই। শুক্রবার দুই-তিনশো মানুষের নামায হয়। শিয়ালদহের দিকে আর একটু এগিয়ে এসে ১০০ বেলেগাটা মেন রোডে রয়েছে আর একটি মসজিদ। সেখানে অবশ্য পাঁচ-ওয়াক্ত নামায হয়। আসরের সময় বেশ কয়েকজনকে দেখাও গেল মসজিদে। মুসল্লিরা জানান, তাঁরা কেউই স্থানীয় নন। দোকানে কাজ করেন। একজন ইমাম আছেন। আশেপাশে বসতি নেই বলে মসজিদে মুসল্লি হয় না।
0 Comments