আসিফ রেজা আনসারী
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অনগ্রসর শ্রেণি কমিশন পশ্চিমবাংলার ৩৫টি সম্প্রদায়কে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি বা ওবিসি তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে তীব্র প্রতিবাদ জানাল সিপিএম। বুধবার সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এই এই সাংবাদিক সম্মেলন থেকে তিনি ক্ষোভ উগরে দেন। কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয় সরকারকেই কড়া ভাষায় তুলেধনা করেন সেলিম।
এ দিন মুহাম্মদ সেলিম বলেন, বিজেপি ও আরএসএস দেশের সংখ্যালঘু মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে মনে করে। তাদেরকে সব রকম সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে তাদের যে প্রয়াস, তারই অংশ হিসেবে ওবিসি তালিকায় ৩৫টি সম্প্রদায়কে বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার খুব পরিকল্পিতভাবে চুপিসারে ওবিসি’র থেকে ৩৫টি মূলত বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায়কে জাতীয় তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে।
দেশের ওবিসি আন্দোলনের ইতিহাস নিয়েও তিনি আলোকপাত করেন সেলিম।তাঁর কথায়, অনেক লড়াই সংগ্রামের পর ওবিসি-র বিষয়টি সামনে আসে। প্রথমে মণ্ডল কমিশন পরে রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য পেশা ও তাদের জাতিগত দিক দেখে সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করা হয়। দেশের মধ্যে প্রথম বামফ্রন্ট সরকার ওবিসি-এ ক্যাটাগরির জন্য ১০ এবং বি ক্যাটাগরি জন্য ৭ শতাংশ হারে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। ওবিসি দীর্ঘদিন আগে চালু হলেও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় সঠিকভাবে কেন কার্যকরী করা হয়নি সে নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সেলিম। তিনি বলেন, কোর্ট সম্প্রতি কিছু ওবিসি বাতিল করেছে। তার আগে বারবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মমতা সরকারের ওবিসি সংরক্ষণ নীতির ত্রুটি ছিল, সেই ত্রুটি সারানোর ব্যবস্থা করেনি সরকার। তিনি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরাসরি বলেন, বিজেপি মুসলিমদের সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন মনে করে। তাদের শিক্ষা, চাকরি বা অন্যান্য সমস্ত কিছু থেকে উৎখাত করতে চায়, তারই অংশ হিসেবে এটা করা হয়েছে।
![]() |
সাংবাদিক সম্মেলনে সেলিম |
সেলিম বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৫০ সালের দিকে তপশিলি জাতির সংরক্ষণ চালু হয়েছিল। তারপরে বিভিন্নভাবে অন্যান্য বেশ কিছু যেমন খ্রিস্টান, বৌদ্ধ বা শিখদের তালিকায় আনা হয়। কিন্তু মুসলিমরা আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকলেও তাদের সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ওই বিজ্ঞপ্তি বাতিলের জন্য দীর্ঘদিন দাবি জানিয়েছি। অবশেষে ওবিসি হয়েছিল। সেই সাংবিধানিক অধিকারকেই খর্ব করা হচ্ছে।
এ দিকে বাংলার ৩৫ টি সম্প্রদায়কে কেন্দ্রের ওবিসি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে ন্যাশনাল কমিশন ফর ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস-এর চেয়ারম্যান জানান, কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে যে সমস্ত সম্প্রদায়ের ওবিসি বাতিল হয়েছে, সেগুলোকেই তালিকাচ্যুত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি যেহেতু সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের তরফে তুলে ধরা হয়েছে অর্থাৎ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা রয়েছে। এমন অবস্থায় কেন তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে কেন্দ্র সে সম্পর্কে অবশ্যই তিনি জবাব দিতে পারেননি।
0 Comments