কমপ্যাক্ট স্টার, ওয়ার্মহোল ও ব্ল্যাকহোল নিয়ে সফল গবেষণা, সোমি আকতার পেলেন স্বীকৃতি

বেঙ্গল মিরর ডেস্ক: সৌরজগতের গ্রহ, গ্রহাণুপুঞ্জ এবং তারকারাজি নিয়ে দুনিয়াজুড়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। বিশেষ করে 'কমপ্যাক্ট স্টার', 'ওয়ার্মহোল' ও 'ব্ল্যাকহোল' নিয়েও বিজ্ঞানীদের বিস্তর কৌতুহল। আর এইসব জিনিস নিয়ে গবেষণা করে প্রশংসিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সোমি আকতার। মঙ্গলবার ছিল তার গবেষণাসন্দর্ভের উপর বিশেষ সেমিনার। সেখানেই অন্যান্য গবেষক, পড়ুয়া, অধ্যাপক ও পরীক্ষকের সামনে সফলভাবে সোমি তুলে ধরেন তাঁর গবেষণাকর্ম। মিলল স্বীকৃতিও। সোমি আকতার মহাকাশের ঘূর্ণায়মান ওয়ার্মহোলের ছায়া (শ্যাডো) বিশ্লেষণ করেছেন। কমপ্যাক্ট স্টার, ওয়ার্মহোল এবং ব্ল্যাকহোলের উপর তাঁর তাত্ত্বিক গবেষণাভিত্তিক পিএইচডি সম্পন্ন করলেন সোমি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারুক রহমান ও প্রফেসর পিয়ালী ভড়ের যৌথতত্ত্বাবধানে সম্পাদিত হয়েছে এই গবেষণা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষকের কাজ দেশ-বিদেশের বহু প্রখ্যাত বিজ্ঞান গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত ও প্রশংসিত হয়েছে।

বাবা‌-মায়ের সঙ্গে সোমি আকতার 

সোমি আকতারের গবেষণা ও মহাকাশ বিজ্ঞানের জটিল ক্ষেত্রকে নতুন গবেষকদের কাছে সহজ করে তুলবে। আগামীতে সোমি আকতারের কাজ প্রেরণা দেবে বলেই মনে করেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক তথা বিজ্ঞানী ড. মেহেদী কালাম।

এ নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, কম্প্যাক্ট স্টার, ওয়ার্মহোল বা ব্ল্যাকহোলের মত মহাকাশের এই জটিল বিষয় নিয়ে যে সমস্ত গবেষণা হচ্ছে, তাত্ত্বিকভাবে এই কাজটির মধ্যে অভিনবত্ব আছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানচর্চায় আগামী দিনে আরও নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি করবে বলেও মনে করেন তিনি। একই কথা বলছেন তাঁর রিসার্চ গাইড ড. ফারুক রহমান।

মঙ্গলবার গবেষক জানান, বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট পদার্থকে মডেল করা হয়েছে। মাধ্যাকর্ষীয় তরঙ্গ জিডব্লিউ-১৭০৮১৭ নিয়েও কাজ করতে হয়েছে। ছায়া বিশ্লেষণ করে ওয়ার্মহোল শনাক্তকরণ সহজ করে তুলবে গবেষণাকর্ম। তিনি নিজেও তাঁর প্রকাশিত গবেষণাপত্র নিয়ে তথ্য তুলে ধরেন। কমবেশি ১৭টি গবেষণাপত্র রয়েছে সোমির। কাজ করেছেন নিয়াজ উদ্দিন মোল্লা, ড. ফারুক রহমান, জি. মুস্তাফা, শ্যাম দাস, এম. গোভেন্দর, বিভাস দাস, বি. সি. পাল, নয়ন সরকার, সুস্মিতা সরকার, অনিল যাদব প্রমুখ গবেষক ও বিজ্ঞানীদের সঙ্গে।

গাইড ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে 

প্রসঙ্গত, সোমি আকতারের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে। সে অশোকনগর গার্লস স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমি পাস করে কলকাতা মৌলানা আজাদ কলেজ থেকে গণিতের সাম্মানিক স্নাতক হন। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসিতে ভালো রেজাল্ট করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বালিগঞ্জ সায়েন্স ক্যাম্পাসের এই ছাত্রী সিএসআইআর নেট উত্তীর্ণ হয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা শুরু করেন। ২০২০ সালে শুরু হয় গবেষণা। করোনাকালে সব যখন স্তব্ধ তখনও সোমি ছিল সক্রিয়। গবেষণা ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি কলেজে সমান্তরালভাবে চলতে থাকে অধ্যাপনাও। তিনি নিযুক্ত রয়েছেন তিনি। তাঁর বাবা এমডি আবুল মণ্ডল অবসরপ্রাপ্ত পুরকর্মী। মা স্কুলশিক্ষিকা। বোন ডা. সেলিনা মুস্তাফি কলকাতার এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এমডি করছেন। দিদির সাফল্যের রাজপথ বিনির্মাণের শুভমুহূর্তে বাবা, মা, বন্ধু, সহকর্মীদের সঙ্গে তিনিও ছিলেন সাক্ষী। 

Post a Comment

0 Comments