অর্পণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাল্মিকী বা মহর্ষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস বিরোচিত ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য হল রামায়ণ। এই রামায়ণে যেমন প্রকাশিত হয় প্রাচীন ভারতবর্ষের সমাজ ব্যবস্থা, রাজতন্ত্রের প্রকৃতি, আর্থ–সামাজিক অবস্থা রাজা–প্রজা সম্পর্ক ঠিক তেমনিভাবেই এই রামায়ণের সাহিত্যরস বরাবরই পাঠক মহলকে আকৃষ্ট করেছে।
পরবর্তীকালে আমরা দেখেছি যে ভক্তি আন্দোলনে হিন্দুধর্মের সমাজসংস্কারের লক্ষ্যে যে সমস্ত ব্যক্তির আবির্ভাব হয়েছিল তাদের সাহিত্য সৃষ্টিতে স্থান পেয়েছিল রামায়ণের বিভিন্ন কাহিনী প্রকৃত অর্থে বলা যেতে পারে রামায়ণ ভারতবর্ষের সংস্কৃতির অন্যতম একটি প্রকাশ। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে মেরুকরণের রাজনীতির প্রভাবে রামায়ণকে যেভাবে হিন্দুধর্মের ও একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তা তীব্র নিন্দার দাবি রাখে।
![]() |
প্রতীকী ছবি |
প্রথমেই বলে রাখা দরকার যে রামের জীবনীকে কেন্দ্র করে ভারতবর্ষের বহু স্থানের কথা রামায়ণে পাওয়া যায়। তার কিছু কিছু জায়গার হিস্টরিকাল গুরুত্ব এবং মাইথোলজিক্যাল গুরুত্ব, দুই বিদ্যমান । কিন্তু এমন বহু জায়গা ঘটনা রয়েছে যা শুধুমাত্রই মাইথোলজিক্যাল ঐতিহাসিক সত্যতা তার মধ্যে নেই বললেই চলে। বর্তমানকালে যেভাবে রাম নামকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং বাদী-বিবাদী দুজনেই রামকে কেন্দ্র করে একে অপরকে কুৎসা করছে , তা ভারতীয় সংস্কৃতির পক্ষে লজ্জাজনক। উৎসবের সার্থকতা সেখানেই যেখানে উৎসব সর্বধর্ম মানুষের মধ্যে তার বার্তা, অনুভূতি পৌঁছে দিতে পারে উৎসব মানেই মেলবন্ধন। কিন্তু বর্তমানকালে দেখা যাচ্ছে যে রামনবমীকে কেন্দ্র করে যেভাবে অস্ত্রের মিছিলের সমাহার তাতে শুধুমাত্র একটিমাত্র রাজনৈতিক দলেরই বেশি শক্তির প্রকাশ অনুভূত হয় । বিগত কয়েক বছর আগেও বিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে এই দিনে কোনও ছুটি ছিল না। কিন্তু বর্তমানকালে দেখা যায় যে এই দিনটি একটি পূর্ণদিবস ছুটি হিসেবে বিবেচিত হয় , যা একাডেমিক ইয়ারের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তরে সুস্থ রাজনীতি সর্বদা কাম্য । কিন্তু রামনবমীকে কেন্দ্র করে যে ঘৃণ্য রাজনীতি ও ধর্মীয় মেরুকরণ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়–সহ পশ্চিমবঙ্গের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় দেখা যাচ্ছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয় বলে একজন শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি। একজন সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক ও ছাত্র হিসেবে একথাই বলা যেতে পারে যে উৎসবের সার্থকতা সেখানেই, দেবতার কৌলিন্য তখনই মান্যতা পায় যখন তা সর্ব–ধর্ম, সর্বশ্রেনীর মানুষের মধ্যে প্রসারিত হয়। কিন্তু এই উৎসব তার ব্যতিক্রম বলেই বিগত কয়েক বছরে দেখা যাচ্ছে। তাই কোনও রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র হিসেবে নয়, ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যতম ধারা হিসেবে ব্যবহৃত হোক রামায়ণ ও রাম জন্ম উৎসব। তাহলেই সার্থকতা পাবে ভারতের সংস্কৃতি ও ভারতের আদি মহাকাব্যের গুরুত্ব।
0 Comments